News Bangla

সুমন দাসের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে গ্রামবাসীর সংবাদ সম্মেলন

শামীম আখতার। কেশবপুরের গৌরিঘোনা ইউনিয়নের ভেরচি দাসপাড়া এলাকায় বহু অপকর্মের হোতা সুমন দাসের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে গ্রামবাসী সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বুধবার দুপুরে ন্যাশনাল প্রেস সোসাইটি গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থা কেশবপুর উপজেলা শাখার কার্যালয়ে এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গৌরিঘোনা ইউপি সদস্য আসাদুজ্জামান। ভেরচি দাসপাড়ায় ৬৫ পরিবার বসবাস করে এরমধ্যে অধিকাংশ পরিবার সুমন দাসের হাতে নির্যাতিত।

লিখিত বক্তব্যে ইউপি সদস্য আসাদুজ্জামান বলেন, ভেরচী (দাস পাড়া) গ্রামের গোবিন্দ দাসের ছেলে সুমন দাস (২৫) কেশবপুর উপজেলার ৯ নম্বর গৌরীঘোনা ইউনিয়নের ভেরচী গ্রামের ঋষিপাড়াসহ অত্র এলাকার মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টিসহ দাঙ্গা-হাঙ্গামা মাধ্যমে প্রভাব বিস্তারের কারণে বর্তমানে এলাকাবাসী অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রভাবশালী এক জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় থাকায় সে বেপরোয়া ও দূর্ধর্ষ প্রকৃতির হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ কোথাও অভিযোগ করতে সাহস পায় না।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, সুমন দাস এতটাই ভয়ঙ্কর যে, সে বর্তমানে ভেরচী গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে জুয়েল আহম্মেদ ও বহিরাগত বিভিন্ন মামলার আসামী শফিকুল ইসলাম ডঙ্কারকে সঙ্গে নিয়ে বুরুলী গ্রামের রবেন্দ্র নাথ বৈরাগ্যের ছেলে দিপক বৈরাগ্যের নিকট থেকে গভীর নলকূপ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ১৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে প্রতিবাদ করায় তাকে দেখে নেওয়ার হুমকী অব্যাহত রেখেছে। ভেরচী গ্রামের অমারেশ দাসের স্ত্রী জ্যো¯œা দাসকে কুপ্রস্তাব দিলে সে রাজি না হওয়ায় গোপনে মোবাইলে তার ছবি উঠায়ে বিকৃত ও অশ্লীল করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়াসহ কুপ্রস্তাব অব্যাহত রেখেছে।

একই গ্রামের পঞ্চানন দাসের ছেলে তিতাস দাসকে দলে ভিড়ানোর প্রস্তাব দিলে সে রাজি না হওয়ায় বিনা অপরাধে মারপিটসহ বিভিন্ন প্রকারের ভয়ভীত দেখিয়ে বাড়ি ছাড়া করেছে। সে বর্তমানে সে নিরুদ্দেশ, তার পরিবার তাকে আজও খুঁজে পায়নি। তাদের ধারণা যে, সুমন দাস হয়তো তাদের ছেলের সঙ্গে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটিয়েছে।

ওই গ্রামের বিশ্ব দাসের মেয়ে স্বপ্না দাসের বিবাহের পর তার স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকদের কান ভাঙ্গিয়ে সংসার নষ্ট করে বিবাহ বিচ্ছেদ করতে বাধ্য করেছে। একই গ্রামের প্রভাত দাসের মেয়ে প্রীয়াঙ্কা দাসের বিবাহের পরও কুপ্রস্তাব ও উত্যক্ত অব্যাহত রেখেছে। ফলে তার স্বামীর ঘর করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। সে দীর্ঘদিন ধরে ঋষি পাড়ার উঠতি বয়সী মেয়ের উত্যক্তসহ কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছে। তার কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে সে গোপনে ওই মেয়েদের ছবি মোবাইলে ধারণ করে ওই ছবি বিকৃত করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকী দিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করে। শুধু তাই নয়, সে ওই পাড়ার গৃহবধূদেরও কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছে। এমনকি বিবাহযোগ্য মেয়েদের বাইরে থেকে বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে আসলে তাদের সঙ্গে ওই মেয়ের নামে কুৎসা লটিয়ে বিয়ে ভেঙ্গে দেয়। তার দাদাগিরিতে ওই এলাকায় বসবাসকারীরা অতিষ্ট হয়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা, সুমন দাস একজন মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী। প্রতিদিন রাতে বিভিন্ন এলাকা থেকে সন্ত্রাসী ও মাদক সেবীরা ওই পাড়ায় সুমন দাসের সঙ্গে গোপন বৈঠক করে। সে কারণে এলাকাবাসী তার অপকর্মের প্রতিবাদ করতে সাহস পায়না। তারই ফলশ্রুতিতে গত ১৪ মে ঘটে যাওয়া মৃত লব দাসের ছেলে মান্দার দাসের (৫০) বসত বাড়ীর জামরুল গাছ থেকে কে-বা কারা জামরুল পাড়ে। এ ঘটনায় মান্দার দাস কাউকে উদ্দেশ্য না করেই বকা-ঝকা করে। বিষয়টি সুমন দাস নিজের গায়ে টেনে নিয়ে প্রভাব খাটিয়ে গত ১৫ মে সকালে সুমন দাস, তার বাবা গোবিন্দ দাস এবং তার মা চায়না দাসকে সঙ্গে নিয়ে মান্দার দাসের বসত বাড়িতে অনাধিকার প্রবেশ করে তাকে ও তার বৃদ্ধ মাকে জুতা ও কাপড় কাচা কাঠের পাট দিয়ে এলোপাতাড়ীভাবে মারপিট করে গুরুত্বর জখম করে। তাদের ডাক-চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসলে বিবাদিরা বিভিন্ন প্রকারের ভয়-ভীতি ও খুন জখমের হুমকি প্রদান করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ওই সময় প্রতিবেশীরা গুরুত্বর জখম ব্যক্তিদের উদ্ধার করে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

মান্দার দাস কিছুটা সুস্থ হয়ে গত ১৬ মে ২০২১ তারিখ ঘটনা উল্লেখ করে কেশবপুর থানায় ১। সুমন দাস (২৬), পিতা: গোবিন্দ দাস, ২। গোবিন্দ দাস (৫০), পিতা: মৃত কুশপদ দাস, ৩। চায়না দাস (৪৫), স্বামী: গোবিন্দ দাসের নামে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর সুমন দাস সত্য ঘটনাকে আড়াল করে নিজের অপকর্ম ধামাচাপা ও নিজেকে রক্ষার জন্য মান্দার দাসের পরিবারকে হয়রাণী করতে একই সম্প্রদায়ের লোক হয়েও সে নিজেকে সংখ্যালঘু দাবি করে মিথ্যা, ভীত্তিহীন ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সুমন দাস ইতিপূর্বেও মান্দার দাসকে গাছে বেঁধে মারপিট করে এবং সে দীর্ঘদিন ধরে মান্দার দাসের পরিবারের উপর অন্যায়, অত্যাচার, মারপিট ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে। সুমন দাস বেপরোয়া ও দূর্ধর্ষ প্রকৃতির লোক হওয়ায় মান্দার দাস ভয়ে ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করতে পারেনি।

সুমন দাস এলাকার আব্দুস সামাদের ছেলে জুয়েল আহম্মেদ ও বহিরাগত বিভিন্ন মামলার আসামী শফিকুল ইসলাম ডঙ্কারকে সঙ্গে নিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতে যেয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করলে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করায় হিন্দু-মুসলিমদের নামে মিথ্যা, ভীত্তিহীন ও বানোয়াট অভিযোগ করে সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টি করে চলেছে। বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণসহ দায়ি ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনের পর এলাকাবাসীরা গনস্বাক্ষর করে উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করবেন বলে জানান। সংবাদ সম্মেলনের সময় উপস্থিত ছিলেন, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা রবিউল ইসলাম রবি, সুদেব দাস, পঞ্চানন দাস, মোহন দাস, সুধাময় কুন্ডু, সুরঞ্জন কুন্ডু, আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ।