News Bangla

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে আগামীকাল দেড় বছর পর

করোনা মহামারীর দাপটে দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পর আগামীকাল (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে খুলেছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আবার ক্লাসে ফিরছেন কয়েক লাখ শিক্ষার্থী ও শিক্ষক। স্কুল খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে দেশের সব জেলায়। শেষ হয়েছে স্কুল ধোয়ামোছার কাজ। এখন চলছে শেষ প্রস্তুতি।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর করোনার সংক্রমণ বাড়লে কি করা হবে এবং ক্লাস কিভাবে চলবে, সে বিষয়ে সরকারেরও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে গেলে আবারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে, শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) একথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ই নেবে বলে জানান তিনি।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয় সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানান, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেলে সেই প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হবে। আগামীকাল থেকে সশরীর ক্লাস শুরু হলেও  ক্লাসের সংখ্যা সীমিতই থাকছে।

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাবে। আর অন্য শ্রেণিগুলোর শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে এক দিন ক্লাসে যেতে হবে। প্রাক্-প্রাথমিক স্তরে সশরীর ক্লাস আপাতত বন্ধ থাকবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) বৃহস্পতিবার নতুন এক নির্দেশনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে মানসম্পন্ন কার্যপ্রণালি বিধি (এসওপি) ঠিক করে দিয়েছে। যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, পরিচালনা কমিটি এবং মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জন্য মোট ৬৩টি নির্দেশনা রয়েছে।

নির্দেশনায় অভিভাবকদের আটটি বিষয় অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এগুলো হলো, সন্তানকে মাস্ক পরিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে উৎসাহ দেওয়া, নিজ স্বাস্থ্য সম্পর্কে (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা) সচেতন করা, প্রতিষ্ঠানে সঠিক সময়ে পাঠানো ও বাসায় আসা নিশ্চিত করা, সন্তান অথবা পরিবারের কোনো সদস্য করোনায় আক্রান্ত হলে অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানকে জানানো, প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা অনুসরণ করা এবং স্কুলে যাওয়ার সময় পানি ছাড়া অন্য কোনো খাবার সন্তানের কাছে না দেওয়া এবং বাইরের খাবার না খাওয়ার বিষয়ে সন্তানকে সচেতন করা।

প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব মেনে পাঠদান নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে রুটিন তৈরি করতে নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।

রুটিন তৈরির ১১ নির্দেশনায় বলা হয়েছে- ২০২১ ও ২০২২ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন শিক্ষা প্রাতষ্ঠানে আসবে। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা একদিন প্রতিষ্ঠানে আসবে। সপ্তাহে প্রতিদিন নির্দিষ্ট শ্রেণিতে ২টি করে ক্লাস ধরে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রুটিন তৈরি করবে। রুটিনের সঙ্গে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ব্যবহারিক ক্লাস নির্ধারণ করা যেতে পারে। যেসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক,মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তর সংযুক্ত রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠান ওই সব স্তরের জন্য নির্ধারিত ক্লাসগুলো সমন্বয় করে রুটিন করবে।

এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চলমান ডিগ্রি, সম্মান ও মাস্টার্স পরীক্ষার সঙ্গে সমন্বয় সাপেক্ষে ২০২১ ও ২০২২ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য রুটিন প্রণয়ন করে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করবে। রুটিন প্রণয়নের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ, প্রস্থান ও অবস্থানের সময় স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের মতো ঘটনা না ঘটে। রুটিন এমনভাবে প্রস্তুত করতে হবে যেন ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে এবং প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আপাতত এসেম্বলি বন্ধ থাকবে। প্রতিদিন নির্ধারিত চেকলিস্ট অনুযায়ী তথ্য পাঠাতে হবে এবং পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ক্লাস রুটিন তৈরির ক্ষেত্রে উল্লিখিত বিষয়গুলো অনুসরণ করতে হবে।

অন্যদিকে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাবার আনন্দে ভাসলেও সাম্প্রতিক বন্যায় স্কুলে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডুবে যাওয়া শিক্ষা প্রতিস্থানগুলোর শিক্ষার্থীরা। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যেসব স্কুল বন্যার পানিতে ডুবে গেছে সেসব স্কুল ১২ সেপ্টেম্বর খোলার বাধ্যবাধকতা নেই। তবে সেক্ষেত্রেও শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন, কবে খুলবে স্কুল সে বিষয়ে। সূত্র-একাত্তর টিভি।