ফজলুল বারী।।
রোজিনা যদি নথি চোর হয় সচিবালয় বিটের প্রায় সব সাংবাদিকই মূলত নথি চোর। কারন এসব নথি কেউ না কেউ চুরি করে তাদের হাতে দিয়েছেন বা নিয়েছেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকের আগেপরে অনেক সাংবাদিকদের হাতে নথি চলে আসে। তখন বলা হয় অমুক অমুক সাংবাদিকের সোর্স ভালো। ছাপা রিপোর্ট ধরে ধরে প্রশ্ন করে দেখতে পারেন।
এখন সোর্সরা অনেক ক্ষেত্রে নথি না দিয়ে ছবি তুলে আনতে দেন। সচিবালয় বিটের ঝানু সাংবাদিকদের সিংহভাগের ফোনে এমন নথির পাতার পর পাতার ছবি পাবেন। বুদ্ধিমানদের অনেকে এসব ছবি এক পর্যায়ে ডিলিট করে দেন। বোকা রোজিনা শুনেছি এসব সহজে ডিলিট করতেননা।
এবং তারা বেতন নিয়মিত পান। বোনাস পান একাধিক। তাদের গাড়ি তেল ড্রাইভার খরচও পত্রিকার। কারন পত্রিকা দুটির আয় বেশি। আপনার পণ্যের বিজ্ঞাপন বেশি প্রচারের আশায় আপনারা প্রথম আলোতে দেন। সর্বশেষ বাংলাদেশে গিয়ে দেখেছি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বেশিরভাগের বাড়িতে প্রথম আলো রাখা হয়। আর বাংলাদেশের বিদেশী দূতাবাস, দাতা সংস্থাগুলোর অফিসের প্রধান পত্রিকার নাম ডেইলি স্টার। তাদের বিজ্ঞাপনও পত্রিকাটি পায়।
আরেক কারনে প্লটের চেষ্টা করিনি। কারন প্লটের আবেদনের সংগে যে টাকা জমা দিতে হয় সে টাকা আমার কখনো ছিলোনা। এসব নিয়ে আমার কোন দিন কোন আক্ষেপও ছিলোনা বা এখনও নেই। আমি শুধু সব সময় কাজ করে গেছি। রিপোর্টের কারনে আমি দেশের মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি বা এখনও পাই। আমার হয়ে আমার অনুজ বন্ধু উত্তম চক্রবর্তী রিপোর্টারস ইউনিটির প্লটের জন্য আবেদন করেছিলেন।
জিয়া ক্ষমতায় এসে মিরপুরে সাংবাদিক পল্লী করে যাদের প্লট দিয়েছিলেন! ঢাকায় একমাত্র সাংবাদিক পল্লীটি জিয়ার তৈরি। বংশপরষ্পরায় সেখানকার বাসিন্দা সাংবাদিকরা তাই বিএনপি জামাত করে। আওয়ামী লীগ কোনদিন এটা নিয়ে ভাবেনি। হয়তো ভেবেছে সবতো তাদের গোলাম! আওয়ামী লীগের, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সাংবাদিক নাম দিয়েছি, এটা ভাবতেইতো সবার আরাম। প্লট পল্লী করে দেবো কেনো!
আমি অনুরোধ রাখতে একটা ছোট রিপোর্ট বানালাম ‘অস্ট্রেলিয়া চষে বেড়াচ্ছেন শেখ হাসিনার আইনজীবী’। খবরটা জনকন্ঠের ভিতরের পাতায় ছাপা হয়। সেই মান্নান সাহেব তাতেই খুশি হন। একদিন শেখ হাসিনা আদালতে হাজিরা দিতে এলে সেই নিউজটা আন্ডারলাইন করে তাকে ধরিয়ে দেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে আব্দুল মান্নান খানকে পূর্তমন্ত্রী করা হয়। এটা অনেকের হিসাবে মিলছিলোনা। এরপরে শুনেছি আমাকে দিয়ে যারা রিপোর্ট করিয়েছিলেন তাদের কেউ কেউ তার হাতে প্লট পেয়েছিলেন। এরপর মান্নান খানের স্ত্রীকেও তাদের আতিথ্যে সিডনি বেড়াতে দেখেছি। এভাবে সাংবাদিকদের বদনাম দেয়া সবচেয়ে সহজ। সাংবাদিকদের বদনাম গাইতে সাংবাদিকও পাওয়া যায়। বাংলাদেশের আর সবাই ফেরেশতা। ভুল করে এখনও পৃথিবীতে বাস করেন।