যোগ গুরু রামদেবের বিরুদ্ধে এ বার অভিযোগ দায়ের হলো কলকাতা পুলিশে। অ্যালোপাথি চিকিৎসা নিয়ে মন্তব্যের জেরে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করল ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের পশ্চিমবঙ্গ শাখা। শুক্রবার সিঁথি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে অ্যাসোসিয়েশনের তরফে। অতিমারী আইনে রামদেবকে গ্রেপ্তারির দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
অভিযোগে আইএমএ-র রাজ্য সম্পাদক শান্তনু সেন এবং সভাপতি সন্তোষ মণ্ডল জানিয়েছেন, রামদেবের তথ্য ভুল এবং বিভ্রান্তিকর। শান্তনু বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে রামদেবের মন্তব্যে বিপদ আরও বাড়ছে। তাঁর মন্তব্য চিকিৎসকদের জন্য অবমাননাকর। সমাজকে ভুল পথে চালিত করতে চাইছেন রামদেব।’
অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসাকে ‘বুদ্ধিহীন ও দেউলিয়া’ বিজ্ঞান বলে কটাক্ষ করেন রামদেব। গত রবিবার এ নিয়ে বিতর্ক চরমে ওঠে। একটি ভিডিয়োয় দেখা যায়, রামদেব দাবি করছেন, করোনার জেরে যত রোগী মারা গিয়েছেন, তার চেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার কারণে। স্বাভাবিক ভাবেই এতে প্রবল ক্ষোভ জমে চিকিৎসক মহলে। খোদ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন চিঠি লিখে রামদেবকে তাঁর আপত্তিকর মন্তব্য প্রত্যাহার করতে বলেন। হর্ষ বর্ধন নিজেও পেশায় চিকিৎসক।
রামদেবের মন্তব্যে যে অতিমারীর সময়ে চিকিৎসক মহলে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে, সে কথা জানান কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এর পরে খানিকটা বাধ্য হয়েই মন্তব্য প্রত্যাহার করে নেন রামদেব। কিন্তু তারপরেও অ্যালোপ্যাথির সঙ্গে যোগ ও আয়ুর্বেদের লাগাতার তুলনা করে প্রথম চিকিৎসা পদ্ধতিটিকে প্রশ্নের মুখে ফেলেন তিনি।
রামদেবের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয় আইএমএ উত্তরাখণ্ড শাখা। তাদের তরফে রামদেবকে আইনি চিঠি দিয়ে জানানো হয়, ১৫ দিনের মধ্যে লিখিত ভাবে ক্ষমা না চাইলে তাঁর বিরুদ্ধে এক হাজার কোটি টাকার মানহানির নোটিস পাঠানো হবে। IMA-র তরফে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে আবেদন জানানো হয়, অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা সম্পর্কে ভুয়ো তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত করা হোক রামদেবকে। তাঁকে গ্রেফতার দাবিও ওঠে।
তাঁর বিরুদ্ধে দেশের প্রতিটি রাজ্যে এফআইআরের সিদ্ধান্ত নেয় সর্ববৃহৎ চিকিৎসক সংগঠন। আইএমএ-র রাজ্য সভাপতি সন্তোষ মণ্ডল বলেন, ‘এমন কলুষিত মানুষদের আমরা চিহ্নিত করতে চাইছি। ওঁরা সমাজের কতটা ক্ষতি করছেন, সেটা দেখাতে চাইছি। উনি তো আয়ুর্বেদের কোয়াক ছাড়া আর কিছু না। ওঁর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই যাতে অন্য কেউ এমন কথা বলার আগে একটু ভাবেন।’
IMA-র অভিযোগে বলা হয়েছে, করোনার চিকিৎসা নিয়ে রামদেব বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন, আইনানুযায়ী যা একটি অপরাধ। অসাধু উপায়ে নিজের স্বার্থে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তিমূলক প্রচার করছেন বলেও অভিযোগ। একই সঙ্গে মহামারী রোগ, বিপর্যয় মোকাবিলা আইন-সহ বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক আইনের ধারায় যোগ গুরুর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের আর্জি জানিয়েছে IMA। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। সূত্র-এই সময়।