News Bangla

মধুবালা ভারতীয় চলচ্চিত্রের আরেক ট্রাজেডি কুইন

মিলি সুলতানা।।  পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টো জন্ম থেকেই আলুর দোষে দুষ্ট ছিলেন। তিনি মধুবালার ছবির সেটে গিয়ে হাজির হতেন। সবার সামনেই Flirt করতেন মধুবালার সাথে। দেশভাগ হওয়ার আগে ভারতে প্রচুর সম্পত্তি ছিল ভুট্টোর।

১৯৫৮ সালে ভুট্টো যখন পাকিস্তানের মন্ত্রী হন তখনই ভুট্টোকে ভারতে যেতে হতো। সেই সূত্রেই অনিন্দ্য সুন্দরী সুপারস্টার অভিনেত্রী মধুবালার সঙ্গে তার আলাপ হয়। মধুবালা তখন ‘’মুঘল-ই আজম” ছবির শুটিং করছেন। মাঝে সম্পর্কে চিড় ধরতে শুরু করেছে দিলীপ কুমারের সঙ্গে। মর্মাহত মধুবালার মন তখন নতুন কাউকে খুঁজে পেতে চাইছে। সেই সময় কানাঘুষা ছিল, জুলফিকার আলী ভুট্টোকেই নাকি খুঁজে নিয়েছিলেন মধুবালা! শোনা যায় আনারকলির ঝলক দেখতে জুলফিকার আলি ভুট্টো প্রায়ই হাজির হতেন ‘’মুঘল-ই আজম’’ এর সেটে। ভুট্টোর সঙ্গে মধুবালার এই সম্পর্ক খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। অনেকের মতে, সম্ভবত ভুট্টো বুঝে গিয়েছিলেন তাদের এই স’ম্পর্কের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। কারণ মধুবালার জন্য তিনি শুধুই একটি ভরসার কাঁধ হতে পারেন। জীবনসঙ্গী হওয়ার মতো তাদের সম্পর্ক নেই। তখন মধুবালা দিলীপ কুমারের প্রেমপর্ব চলছিলো। প্রেম ব্যর্থ হওয়ার ব্যাপারটা হজম করতে পারেননি ভুট্টো। শেষ হয় মধুবালা–ভুট্টোর রহস্যময় প্রেম কাহিনী।

তবে দিলীপ কুমারের সাথে গভীর প্রেম ছিল অনিন্দ্য সুন্দরী মধুবালার। কিন্তু তাঁদের প্রেমে দেয়াল হয়ে দাঁড়ান মধুবালার অর্থলোভী বাবা আতাউল্লাহ খান। তিনি ছিলেন অত্যন্ত মুনাফালোভী টাকার পিশাচ। মেয়েকে টাকার মেশিন হিসেবে দেখতেন। তার সেই বাজে স্বভাবের কারণে মধুবালাকে অনেক ভুগতে হয়েছে। মধুবালার অকাল মৃত্যুর জন্য তার বাবাকেই দায়ী করে আত্মীয় স্বজনরা। আতাউল্লাহ খানের জেদের কাছে মধুবালা কোরবানি করেছিলেন দিলীপ কুমারের জন্য তার অমর প্রেম। অনেকে বলে দিলীপ কুমারকে ভুলতেই গায়ক কিশোর কুমারকে কাছে টেনেছিলেন মধুবালা। তবে তাদের দাম্পত্য জীবন বেশিদুর এগুতে পারেনি। ১৯৬৯ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা যান মধুবালা। প্রথমে তাকে যে কবরে সমাহিত করা হয়, সেখান থেকে মরদেহটি সবার অগোচরে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। আসলে কী কারণে মধুবালার মৃত্যু হয়েছিল এবং কেন তার মরদেহ সরিয়ে ফেলা হয়, তা আজ পর্যন্ত উন্মোচিত হয়নি। জীবনের মত মৃত্যুতেও রহস্যময় হয়ে আছেন ভুবনমোহিনী মধুবালা। সৌন্দর্যের জন্য মধুবালাকে ‘’ভেনাস কুইন‘’ বলে সম্বোধন করা হতো।
১৯৫৪ সালে ২৭ বছর বয়সে মধুবালার হৃদপিণ্ডে ছিদ্র ধরা পড়ে। তাঁর খুব রক্তবমি হত। ডাক্তার বিশ্রাম নিতে পরামর্শ দিলেও তিনি আমলে নিতেন না। “মুঘল-এ-আজম” ছবির শুটিংয়ের শেষে মধুবালার হাত পা নীল হয়ে যেত। তিনি এতই রিয়েলিস্টিক ছিলেন যে কারাবন্দীর দৃশ্যগুলিকে আরও বাস্তবায়িত করে তুলতে তিনি শ্যুটিং করার সময় তিনি কোনো খাবারই খেতেন না। একদিন দিলীপ কুমার শ্যুটিংয়ের ফাঁকে বলেছিলেন, ‘এভাবে চললে তো তুমি মারা যাবে”! মধুবালা হেসে জবাব দিয়েছেন,”মৃত্যুর পয়গাম সেই কবে থেকেই মাথার উপর নিয়ে চলছি। রোজ আমি যমদূতকে দেখতে পাই”। তবে তিনি বাঁচার জন্য অনেক আহাজারি করেছেন। তাঁর বোনের বরাত দিয়ে জানা গিয়েছে, তিনি সারাক্ষণ কাঁদতেন। আল্লাহকে চিৎকার করে ডাকতেন তাঁকে যেন এত দ্রুত তুলে না নেন। চিকিৎসক বলেছিলেন ববড়জোর দুই বছর বাঁচতে পারেন মধুবালা। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানকে ভুল প্রমাণিত করে তিনি ৯ বছরই বেঁচেছেন। তবে এই ৯ বছর একটানা শয্যাশায়ী ছিলেন মধুবালা। নিজের অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুকে নিজেই মেনে নিতে পারেননি। অসুস্থতার সময় দেখতে না এলেও মারা যাবার পর তাকে দেখতে এসেছিলেন তাঁর প্রিয়জন দিলীপ কুমার। দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে জীবন কাটিয়েছেন তিনি। মৃত্যুর সময় কাউকেই কাছে পাননি। তারকা মহাতারকাদের শেষ জীবন সবসময় ট্র্যাজিক পরিণতিতে শেষ হয়।