নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় অশীতিপর বৃদ্ধা সালেহা বেগমকে ঘুমন্ত অবস্থায় পুড়িয়ে মারার রহস্য উম্মেচন করেছে পুলিশ। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের ছেলে ইরূপ খন্দকারের পরিকল্পনায় এ পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে জানিয়েছে নড়াইল জেলা পুলিশ। সোমবার (৭ জুন) পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, হত্যাকান্ডে জড়িত বৃদ্ধার নাতি রাশেদ ও নাতনি জামাই মিরাজুল তাদের দাদীকে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে মারার কথা স্বীকার করে ইতিমধ্যে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
পুলিশ সুপার জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জামরিলডাঙ্গা গ্রামের বাবলু, লেন্টু মোল্লাদের সঙ্গে ইরূপ খন্দকারদের বিরোধ দীর্ঘ দিনের। এর জের ধরে গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর বৃদ্ধা সালেহা বেগমের বড় ছেলে আরিফ খন্দকার খুন হন। চলমান বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ মোল্লাদের ফাঁসাতে পরিকল্পনা করেন বৃদ্ধার ছোট ছেলে ইরূপ। পরিকল্পনা অনুযায়ী ইরূপ, নাতি রাশেদ ও নাতনি জামাই মিরাজুল নিজ বাড়ির বারান্দায় ঘুমন্ত সালেহাকে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে।
তিনি আরও জানান, হত্যার পর পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিপক্ষ লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা দেয় ইরূপ। মামলা তদন্তের এক পর্যায়ে জিজ্ঞাসাবাদে বৃদ্ধার দুই ছেলের বৌ নার্গিস ও কুলসুমের জবানবন্দীতে অসঙ্গতি পাওয়া হলে পুলিশের সন্দেহ দানাবাঁধে। পরবর্তীতে তাদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বৃদ্ধাকে পুড়িয়ে মারায় স্বজনদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে আসে।
পুলিশ জানায়, সম্পৃক্ততা পাবার পর রাশেদ ও মিরাজুলকে আটক করে পুলিশ। আটককৃতরা শনিবার (৫ জুন) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
এদিকে এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী বৃদ্ধার ছেলে ইরূপ খন্দকারকে দ্রুত গ্রেফতার করা হবে বলে জানান পুলিশ সুপার।
এর আগে ছেলে ইরূপ খন্দকারের আশ্রয়ে প্রতিপালিত বৃদ্ধা সালেহা বেগমকে গত ২২ মে গভীর রাতে বাড়ির বারান্দায় ঘুমন্ত অবস্থায় পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।
পুলিশ জানায়, আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে গ্রেপ্তার রাশেদ ও মিরাজ উল্লেখ করেছেন, গ্রাম্য প্রতিপক্ষ মোল্লা গ্রুপের লোকজনকে ফাঁসাতে সালেহা বেগমকে পুড়িয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন বৃদ্ধার ছেলে ইরুপ খন্দকার। সে অনুযায়ী ২১ মে দিবাগত রাত ১টার দিকে বৃদ্ধার শরীরে পেট্রোল ঢেলে দেন ছেলে ইরুপ খন্দকার। রাশেদ ম্যাচলাইট দিয়ে আগুন দেন। আগুনে পুড়ে মৃত্যু হওয়ার পর রাত তিনটার দিকে তারা চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। মিরাজ তাদের সঙ্গে থেকে সহযোগিতা করেন । সূত্র-একাত্তর টিভি।