News Bangla

বিজয়ের মাস। জাতীয় পতাকা বিক্রি হচ্ছে শহরে

আ.শ.ম. এহসানুল হোসেন তাইফুর ।।
বাঙালির গৌরবময় বিজয়ের স্মৃতিবিজড়িত মাস ডিসেম্বর। ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও বিজয়ের ৫০ বছরকে সামনে রেখে কেশবপুর শহরের অলিগলিতে মৌসুমি পতাকা বিক্রেতারা হাঁকডাক দিয়ে বিক্রি করছেন দেশের লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর অর্জিত হয় লাল-সবুজের পতাকা। ডিসেম্বর মাস এলেই লাখো শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শুরু হয় জাতীয় পতাকা কেনার হিড়িক। এতে কিছু মানুষের উপার্জনের পথও সুগম হয়। মঙ্গলবার পৌর শহরের প্রধান সড়কে দেখা যায় তেমনি এক মৌসুমি পতাকা বিক্রেতাকে।

বিজয়ের চেতনায় ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিন থেকে জাতীয় পতাকা বিক্রির উৎসব শুরু হয়ে চলে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পর্যন্ত। বিজয়ের মাসে বাড়ির ছাদ, ঘরের বারান্দায়, এমনকি বিভিন্ন ব্যক্তিগত গাড়িতে লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা উড়তে দেখা যায়। এজন্য কেশবপুরে চলছে জাতীয় পতাকা বিক্রির ধুম। মৌসুমী পতাকা বিক্রেতারা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জাতীয় পতাকা বিক্রিতে ব্যস্তসময় পার করছেন।

কথা হয় ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার বীর মুক্তিযুদ্ধা ইসহাক মাতববরের ছেলে মৌসুমি পতাকা বিক্রেতা বদরুজ্জামান মিন্টু (৫৪) সাথে। তিনি জানায়, তাঁর বাবাও একজন বীর মুক্তিযুদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মান জানাতে তিনি ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলা থেকে জাতীয় পতাকা বিক্রি করতে কেশবপুরে এসেছেন। গত ৮ বছর বিজয় মাস এলেই তিনি দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে জাতীয় পতাকা বিক্রি করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার বয়স অনুমান ৪ বছর হবে। শিশু বয়স থেকেই বাবার মুখে দেশ স্বাধীন করার গল্প শুনে তিনি যুদ্ধের কথা হৃদয় দিয়ে অনুভব করেন বলে জানায়। সেই অনুভব থেকেই তিনি জাতীয় পতাকা বিক্রি করে আসছেন। জাতীয় পতাকা বিক্রি করতে তার অনেক ভালোলাগে। প্রতিদিন ৩০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা বিক্রি হয়। বিজয়ের মাস এলেই সবাই পতাকা কিনে তাই ব্যবসাটা ভালো হয়।

তিনি আরো জানান, সংসারের অভাবের কারণে পড়ালেখাও তেমন করতে পারিনি। বাবার মুখে দেশ স্বাধীন করার সংগ্রাম ও যুদ্ধের গল্প শুনেছি। ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে। এত কিছুর বিনিময়ে যে পতাকা, সে পতাকা বিক্রি করতে পারাটাও সম্মানের ব্যাপার। তিনি জানান, ৬ ফুট বাই সাড়ে ৩ ফুট একটি পতাকা বিক্রি করেন ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতিটি ১ ফুট স্টিক পতাকার দাম ১০ টাকা। হাত ও মাথার ব্যান্ড ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করেন তিনি।

পতাকা বিক্রেতা আরো জানান, অন্য সময় তিনি গাজীপুরে ভ্রাম্যমাণ বই বিক্রি করেন। পতাকা বিক্রি কেমন হয় জানতে চাইলে জানান, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সারাদিনে বিভিন্ন আকারের ২০ থেকে ২৫টা পতাকা বিক্রি করা যায়। দিনশেষে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা আয় করা যায়। এটা দিয়েই পরিবার নিয়ে কোনো মতে সংসার চালানো যায়।
জাতীয় পতাকা কিনতে আসা জিল্লু, রাজু, প্রদীপ ও ইব্রাহীম বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ হওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মান জানাতে এই পতাকা কিনেছি।

সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে এই লাল-সবুজের স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি।