নজরুল ইসলাম, মনিরামপুর।। কথা সাহিত্যিক আবুল হুসাইন জাহাঙ্গীরকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় তার রাজগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে স্ত্রী নাসিমা খাতুনের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়েছে। মৃত্যু কালে তিনি ৩পুত্র, আত্মীয় স্বজন সহ বহু গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। তার পরিবারের পক্ষ থেকে সকলের কাছে মরহুমের আত্মার শান্তির জন্য দোয়া প্রার্থনা করা হয়েছে ।
আবুল হুসাইন জাহাঙ্গীর দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ থাকার পরে বুধবার সন্ধ্যা ৬ঃ৫ মিনিটে মৃত্যু বরণ করেন। উপজেলার রাজগঞ্জ মোবারকপুর গ্রামে ১৯৫৭ সালে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন । তার পিতা মরহুম মৌলভী কেরামত আলী গাজী, মাতা মরহুমা আইমানী বিবি। তিনি কেশবপুর উপজেলার সাতবড়িয়া ইউনিয়নের স্বাস্থ ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রে উপ-সহ- কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার হিসাবে কর্মরত ছিলেন।
৪ বছর আগে তিনি চাকুরী থেকে অবসর গ্রহন করেছেন। নিজ কমর্স্থল এলাকায় তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় ডাক্তার ছিলেন। ৪ বছর আগে অবসরে গেলেও আজও তার অভাব সেখান মানুষ চরম ভাবে উপলব্ধি করে। অজ পাড়াগায়ে জন্ম গ্রহন করেও তিনি সাহিত্য চর্চায় ছিলেন অতিমাত্রায় ব্রত। তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৭।
তার রচিত গ্রন্থ হল, চলার পথে, মৃত্যুর সমুদ্র শেষ, গল্পে মধুসূদন, একটু গেলে বুনোপথ, রেখ মা দাসেরে মনে, রজনীগন্ধা বনে ঝড়, নিষিদ্ধ সৌরভ, বিনষ্ট সংলাপ, চির জনম হে, মাধুরী, শঙ্খচুড়, শাওন, নির্বাচিত গল্প (কলিকাতা), তোমাকে ভালবেসে (কলিকাতা), ডহুরী, এস,এম, সুলতান সচল সবাক ইতিহাস, এস,এম,সুলতান কর্ম ও জীবণ, ব্রাত্যজন ইত্যাদি। প্রথম উপন্যাস প্রান্তজন, মারিয়া, লোকজন, কপোতাক্ষী, বালাখানার মেহমান- চলচ্চিত্রায়িত ( আল –মানার অডিও ভিজ্যুয়াল সেন্টার, মগবজার, ঢাকা)। শেষকৃত্য, সুন্দর বনের লোকজীবন, সুন্দরবনের ক্ষুদ্র নৃ, অযাচিত তার সম্পাদিত পত্রিকাঃ ক্ষণিক, স্মৃতি, আগন্তক, শিল্প-সাহিত্য, মেডিক্যাল জার্নল (কুষ্টিয়া)। সম্পাদিত গ্রন্থঃ শিল্পী রফিক হুসাইন বিরচিত -– বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলনের ইতিহাস।
অনুদিত গ্রন্থঃ (Slective novel of ABUL HOSSAUN JAHANGIR)। এসব সাহিত্য রচনায় কৃতিত্বের জন্য তিনি বিভিন্ন সামাজিক এবং সাংস্কিৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে তিনি সংবর্ধিত হয়েছেন। লাভ করেছেন বেশ কিছু পুরস্কার ও সন্মাননা। ২০০৮ সালে রাজগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ এবং রাজগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় তাকে সন্মাননা প্রদান করেন। এছাড়া অনান্য পুরষ্কার ও সম্মননার মধ্যে রয়েছে, ব্র্যাক ট্রাস্ট কিশোরী ক্লাব মেবারকপুর, রংধনু সাহিত্য পুরস্কার ডুমুরিয়া- খুলনা, সুজন সম্মানানা মনিরামপুর, জীবনান্দ দাস সম্মাননা কলিকাতা, বঙ্গবন্ধু সাহিত্য পরিষদ সম্মাননা, ঢাকা। ধান সিঁড়ি সম্মননা, ঢাকা। এছাড়াও লেখক তার রাজগঞ্জের নিজ বাড়ীতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একটি ব্যাক্তিগত গ্রন্থাগার। সেখানে অসংখ্যা বই এবং পত্র পত্রিকা আছে। প্রতি বছর ২১ শে ফেব্রুয়ারী গ্রন্থাগারের সামনে বসে দিন ব্যাপী বই মেলা। অসংখ্যা বইপ্রেমি সেদিন পাঠাগার প্রাঙ্গনে উপস্থিত হয়ে পরিচিত হন নিত্য নতুন বইয়ের সাথে। পাঠকেরা তা বিনামূল্যে পাঠ করেত পারেন। তিনি তার পাঠাগারের পাশেই প্রতিষ্ঠিত করেছেন একটি মসজীদ সেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে স্থানীয় মুসল্লীরা।
বহু প্রতিভার এই সাহিত্যিক চাকুরী থেকে অবসর গ্রহন করার কিছু দিন পরে ষ্ট্রোকে আক্রান্ত হন। চিকিৎসার ফলে কিছুটা উন্নতি হলেও আর তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকার পরে অবশেষে বুধবার সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় যশোর সদর হাসপাতালে তিনি মারা যান।