তোয়াব খান, আমাদের তোয়াব ভাই! তিনি কেবল সাংবাদিক নন, নিশ্চিতভাবেই সাংবাদিকদের সাংবাদিক। আজ তাঁর ৮৭তম জন্মদিন। জন্মদিনে শুভ কামনা। পেশাগত জীবনে পাঁচ দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে তিনি আজ এক প্রতিষ্ঠান। ভূয়োদর্শী মানুষটি অন্তরে আর বাইরে সমান আধুনিক। মিডিয়ার মহীরূহপ্রতিম এই মানুষটির পথচলা অন্তবিহীন। স্মার্ট আর স্টাইলিশ। তাঁর লেখনিও। নির্মেদ আর তীক্ষ্ন। অবশ্য লিখেছেন কম, লিখিয়েছেনই বেশি। নানা রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক পটপরির্তন আর বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনকে সঙ্গে নিয়ে, সেই অভিজ্ঞতায় নিজেকে ঋদ্ধ করে, সময়ের সঙ্গে নিজের সঠিক অভিযোজনে। এজন্যই তিনি সমসাময়িক। আধুনিক।
প্রতিটি ঘটনা তাঁর নখদর্পণে। স্মৃতিদের বিশ্বাসঘাতকতার সুযোগই নেই। আজন্ম বেড়ে ওঠা তাঁর সাতক্ষীরায়। রসুলপুর, বর্ধিষ্ণু গ্রাম। আলোকিতও। ছেলেবেলা থেকে মা যতটা নন, ততটাই তাঁর জীবনকে প্রভাবিত করেছেন খালা (জাতীয় অধ্যাপক এবং শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এম আর খানের মা)। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, খেলাফত আন্দোলনে সরাসরি যুক্ত আত্মীয়স্বজন। মাওলানা আকরাম খাঁ এঁদের অন্যতম। তিনি মাদ্রাসা গড়েছেন বিকল্প শিক্ষায় গ্রামবাসীকে শিক্ষিত করতে। তাঁর জামাতা রেজ্জাক খান যিনি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। মুজফ্ফর আহমেদ, ডাঙ্গেদের সঙ্গে। তোয়াব খান ১৯৭৩-৭৫ সালে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর প্রেস সচিব। আর ১৯৮৭ থেকে ৯১ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের প্রেস সচিব। ১৯৮০-৮৭ সালে তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা। পালন করেছেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকের দায়িত্বও। মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক। তাঁর তীক্ষ্ন লেখনি আর আকর্ষক উপস্থাপনায় নিয়মিত প্রচারিত হয়েছে ‘পিন্ডির প্রলাপ’। স্বাধীনবাংলা বেতার নিয়ে তাঁর রয়েছে ভালো ও মন্দে মেশানো অনুভূতি। ১৯৯৯ সালে কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশ ছিল থিম কান্ট্রি। সেবার অশোক কুমার স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে বক্তব্য দেন তোয়াব খান।
বাংলাদেশের সংবাদপত্রে একেকটি মাইলফলক রচিত হয়েছে তাঁরই নেতৃত্বে। সংবাদপত্রে পুরো পাতা ফ্যাশন আর টেকনোলজির জন্য বরাদ্দের কথা তাঁর আগে আর কেই বা ভেবেছেন! দৈনিক জনকণ্ঠে তিনি সেটাই করেছেন। পাঠককে দিয়েছেন নতুন স্বাদ।
সাংবাদিকদের সম্পর্কে পুরনো ধ্যান-ধারণাকেও তিনি বদলে দিয়েছেন নিজের স্টাইল স্টেটমেন্ট দিয়ে। সকালে যেমন তিনি একজিকিউটিভ ড্রেসে সচ্ছন্দ তেমনি সন্ধ্যায় ক্যাজুয়ালি ক্ল্যাসি। আর এক পোশাকে পরপর দুইদিন… কখনোই নয়।
কেবল পোশাক-আশাকই নয়, সুগন্ধির প্রতিও তাঁর রয়েছে বিশেষ আগ্রহ। যদিও বিষয়টিকে তিনি একটু অন্যভাবেই দেখেন। সুগন্ধি তাঁর কাছে ফ্রেশ থাকার অনুষঙ্গ। বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসে সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান বলতে যা বোঝায়, তার শেষ সলতে তোয়াব খান। শুভ জন্মদিন তোয়াব ভাই। – সাজেদ রহমান, সিনিয়র সাংবাদিক।
Related