ফজলুল বারী, বিশিষ্ট সাংবাদিক।। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনিদের নাম দেয়া হয় জাতির সূর্য সন্তান! মুশতাক, জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া তাদের এই সূর্য সন্তানদের লালন-পালন করেছে। জিয়া-এরশাদ দু’জনেই এদের চাকরি দিয়ে লালন-পালন করেছে বিদেশী দূতাবাসে। এখন টেলিভিশনের বিশিষ্ট বক্তা শমসের মোবিন চৌধুরী ডলারের বস্তা সহ তাদের সঙ্গে বিদেশে যান।
এরশাদ আমলে এই খুনিরা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নেয়। ফ্রিডম পার্টি নামে দল গঠন করে। মিল্লাত নামের দৈনিক পত্রিকা বের করে চালায়। অবজারভার ভবনের সামনের গলিতে মিল্লাতের অফিসে ছিল দূর্গের মতো নিরাপত্তা! সেই মিল্লাতের সাংবাদিকরাও পরে বিএনপি জামায়াতের সাংবাদিকদের সঙ্গে মিশে যান।
খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটার বিহীন নির্বাচনে খুনি রশীদকে বিরোধীদলের নেতা বানান। খুনি ফারুক সেই নির্বাচনে অংশ নেননি। খালেদার ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের দিন আওয়ামী লীগ গণকার্ফু ঘোষনা করলে সারাদেশ অচল হয়ে পড়ে। এমন হরতাল বহুদিন বাংলাদেশ দেখেনি।
ফারুকের ঘনিষ্ঠ একজন সাংবাদিক ছিলেন হারুনুর রশীদ। ছোটখাটো গড়ন। গণকার্ফুর মধ্যে তার অটোতে আমাকে খুনি ফারুকের বাসায় নিয়ে যান। সেনানিবাসের শেষ প্রান্তে তার বাড়িটা এমন জায়গায় ছিল যে কেউ ধাওয়া দিলে বিমান বন্দর সড়ক দিয়ে যাতে পালাতে পারে। ঘরের মধ্যে বসে একটার পর একটা সিগারেট খাচ্ছিল খুনি ফারুক। কথাবার্তায় তার ভাবখানা ছিল যে সে কিছুই ভয় পায়না। আসলে যে ভয় পায় সেই এ ধরনের ভাব দেখায়।
খুনি ফারুক সেই আড্ডায় নতুন একটি তথ্য দেয়। তাহলো লুচু এরশাদ এক পর্যায়ে এক বিধবাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। কিন্তু ট্র্যাডিশনাল আর্মি এটা মেনে নেবেনা, এরজন্যে তারা এতে রাজি হয়নি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসছে দেখে খুনি রশীদরা বিদেশে পালিয়ে যায়। কিন্তু ঘাড়মোটা খুনি ফারুক যায়নি।
আমার মনে হয়েছে খুনি ফারুকের ধারনা ছিল আওয়ামী লীগ ইনডেনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করতে পাবেনা। তাদের বিচারও করতে পারবেনা। তাছাড়া জিয়া-এরশাদ জমানায় এমন একটি ধারনা প্রচার করা হয় যে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করা মানে সেনাবাহিনীর গায়ে হাত দেয়া!
আরেক গল্প আমাদের বলা হতো! তাহলো, সামরিক অভ্যুত্থান সফল হলে বিচার হয়না! ব্যর্থ হলে বিচার হয়! জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড এদের বিবেচনায় ছিল একটি সফল সামরিক অভ্যুত্থান! এদের রাজনীতির ধারক-বাহক মির্জা ফখরুলগং। যারা এখন সকাল-সন্ধ্যা দেশের মানুষকে গণতন্ত্র শেখায়! মোটকথা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বেনিফেশিয়ারি জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া যখনই সুযোগ পেয়েছে তখনই খুনিদের সেবা করেছে। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে এদের কেউ রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী হবার সুযোগ পেতোনা। সর্বশেষ ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়া এই বিচার আটকে দেন। এর মাশুল তিনি এখন দুনিয়াতে থাকতেই আল্লাহর কাছে পাচ্ছেন। কারন যে বঙ্গবন্ধু তার সংসার রক্ষা করেছেন, তার সঙ্গে তিনি বেঈমানি করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ একটি তথ্য বলেছেন তাঁর এক বক্তৃতায়। তাহলো, ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলার সময় সরকারি আতিথেয়তায় খুনি ডালিমরা ঢাকায় ছিল। আর আমি তখন লিখেছিলাম, গ্রেনেড হামলার নকশা সাজিয়ে তারেক রহমান কক্সবাজারে চলে যায়। মিডিয়ায় তখন ২/৩দিন নিখোঁজ ছিল তারেক। তার রাজনৈতিক অভিষেক উপলক্ষে চ্যানেল আইতে বিশাল এক ইন্টারভ্যু প্রচার করা হয়। তেজগাঁওতে এখন চ্যানেল আইর যে অফিস, এর জমি বিএনপি আমলে প্রাপ্ত।
আজ টিভি’র স্ক্রলে দেখছিলাম খুনি ডালিম, নূর, রাশেদ, মোসলেহ উদ্দিনের খেতাব সহ নানাকিছু বাতিল হচ্ছে। এরসঙ্গে একটু যুক্ত করি। এদের অপরাজনীতির ধারক বাহক মির্জা ফখরুলগং কোন দিন ক্ষমতায় ফিরতে পারলে খুনিদের সব খেতাব পুনর্বহাল করবে। কারন এই খুনিরাই তাদের রাজনৈতিক মঞ্চ-গদি সব দিয়েছে।