ঝাড়খন্ডের রাজধানী রাঁচি যাব। পরিকল্পনা পাকা। গুগল ম্যাপ দেখে ঠিক করলাম, কোথায় কোথায় যাবো। বেনাপোল পার হয়ে পেট্রাপোল থেকে সোজা চাকদাহ-কল্যাণী, মগরা, পান্ডুয়া, মেমারি, বর্ধমান, পানাগড়, দুর্গাপুর, রানীগঞ্জ, আসানসোল হয়ে রাতে থাকবো ঝাড়খন্ডের ধানবাদ শহরে। বেনাপোল সীমান্ত পার হওয়ার পর মনে হলো আরে এই পথেই তো কিন্তু আমাদের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের বাড়ি। সেখানে কখনও যাওয়া হয়নি। ঠিক করলাম যাবো। জীপ গাড়ির চালককে বললাম, চুরুলিয়া চলো। সালটা ২০১৬। জুন মাস। প্রচন্ড গরম। আমি যখন বর্ধমান শহর ছাড়িয়ে দুর্গাপুর তারপর রানীগঞ্জ পৌঁছালাম, তখন প্রায় সন্ধ্যা।
যাইহোক ওই পথে ধরে চললাম। চুরুলিয়া গ্রামটি জামুরিয়া ব্লকে পড়েছে। জামুরিয়া পর্যন্ত রাস্তাটা বেশ ভালো। এরপর সরু সড়ক ধরে আরও প্রায় ২০ কিলোমিটার যাবার পর চুরুলিয়া গ্রাম। চুরুলিয়া গ্রামে ঢুকতেই কবির ম্যুরাল চোখে পড়লো। অজয় নদীর ঘাটের একটু আগেই চুরুলিয়ার ছোট্ট একটি বাজার। চৌরাস্তার ডানদিকের সরু ও ভাঙাচোরা রাস্তার দু’পাশেই মাটির ঘর। বেশিরভাগই শন বা বিচালির ছাউনী। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা রাস্তায় খেলা করছে। যানবাহনের কোনো ব্যস্ততা নেই। ‘কবিতীর্থে’ পৌঁছে যাচ্ছি অজান্তেই। এসব গ্রামীণ আর প্রাচীন জিনিসের সাক্ষী হতে হতে কিছুক্ষণ পর পৌঁছে গেলাম কবিতীর্থে। প্রশ্ন জাগবে আর উত্তর পাবেন একইসঙ্গে! কবি কোথায় থাকতেন, কোথায় পড়তেন এবং স্কুলের আঙিনা কোথায়! মসজিদের সামনেই পুকুর যেন কালের সাক্ষী! এখানেই কবি সাঁতার শিখেছেন, গোসল করেছেন।
নজরুলের ছেলে সব্যসাচী কবির মৃত্যুর পর কবরের মাটি (বাংলাদেশে কবির কবর থেকে) নিয়ে কবির প্রতীকী কবরস্থান ও পাশে কবিপত্মী প্রমীলা দেবীর কবর-দারুণ অনুভূতি দেবে যে কোন মানুষকে।
নজরুল একাডেমিতে গবেষণা করার জন্য লাইব্রেরিতে কবির বিভিন্ন বই, তার সম্পাদিত বিভিন্ন ম্যাগাজিন রয়েছে। কবির মক্তব এখন ‘নজরুল বিদ্যাপীঠ’ নামে পরিচিত। যেখানে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ানো হচ্ছে। আরও আছে নজরুল কলেজ। কলেজ মাঠে কিছুক্ষণ বসলাম। পাশে কবির পারিবারিক কবরস্থান, সেখানে গেলাম। ইচ্ছা ছিল আরও একটু ঘুরি। কিন্তু হাতে সময় কম। আবার আসবো। মনকে এই শান্তনা দিয়ে জীপে চেপে বসলাম।