News Bangla

গোবর মাখা ও গোমূত্র পান করে করোনা মোকাবেলায় চিকিৎসকের সাবধান বাণী (ভিডিও)

কেউ বলছেন সারা গায়ে গোবর মেখে বসে থাকতে। কেউ আবার গোমূত্র পান করার পরামর্শ দিচ্ছেন। করোনা মোকাবিলায় ‘মোক্ষম দাওয়াই’ বাতলে দিচ্ছেন রাজনীতিকরাও। তা নিয়ে এ বার সতর্ক করলেন চিকিৎসকরা। তাঁদের মতে, কোভিড রুখতে যাদের কার্যকারিতা প্রমাণ হয়নি, সে সব এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। নইলে হিতে বিপরীত হতে পারে। শরীরে বাসা বাঁধতে পারে অন্য রোগ।

করোনা তাড়াতে গোমূত্র এবং গোবরের কার্যকারিতার কথা শোনা যাচ্ছে গত বছর থেকেই। অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পরও তার অন্যথা হয়নি। গুজরাতে গোশালার বাইরে রীতিমতো লাইন দিয়ে গোবর মাখতে এবং গোমূত্র সংগ্রহ করতে যাচ্ছেন স্থানীয়রা। সংবাদমাধ্যমে সে খবর প্রকাশিত হতেই এ বার উদ্বেগের কথা জানাল ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)।

কোভিড কেয়ার সেন্টার তৈরি হয়েছে গোশালায়। সেখানে সকাল বিকেল রোগীদের দুধ এবং ঘিয়ের সঙ্গে গোমূত্র মিশিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে। অবৈজ্ঞানিক এই ঘটনা ঘটছে গুজরাটে। এখনো পর্যন্ত সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অন্যদিকে উত্তরপ্রদেশে বালিয়ার বিজেপি বিধায়ক সুরেন্দ্র সিংহ ভিডিও পোস্ট করেছেন সোশ্যাল নেটওয়ার্কে। সেখানে দেখানো হয়েছে সকালে খালি পেটে কী ভাবে গোমূত্র পান করতে হবে। ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে, গোমূত্র পান করলে করোনা হবে না।

গুজরাটের বনসকণ্ঠা জেলার একটি গ্রামে কোভিড কেয়ার সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। বস্তুত গোটা দেশেই কোভিডের ভয়াবহতার কারণে অসংখ্য কোভিড কেয়ার সেন্টার তৈরি হয়েছে। সেখানে রোগীদের ভর্তি করে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আইসোলেশনের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।

কিন্তু গুজরাটের কোভিড কেয়ার সেন্টারটি সম্পূর্ণ অন্যরকম। একটি গোয়ালঘর বা গোশালায় তৈরি হয়েছে সেন্টারটি। যার দেওয়ালে লেপা রয়েছে গোবর। চিকিৎসার জন্য দেওয়া হচ্ছে দুধ, ঘি এবং গোমূত্র। সেন্টারের কর্মকর্তাদের দাবি, আয়ুর্বেদিক প্রক্রিয়ায় চিকিৎসা চলছে বলেই এ ধরনের জিনিস খাওয়ানো হচ্ছে রোগীদের।

যদিও চিকিৎসকদের বক্তব্য, এতে শরীরের আরো বেশি ক্ষতি হচ্ছে। চিকিৎসক সাত্যকি হালদারের বক্তব্য, ”এই ধরনের চিকিৎসার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। গোমূত্র পান করে শরীরে নানা সমস্যা হতে পারে। অতীতে তেমন ঘটনা আমরা দেখেছি।” গুজরাটের ওই কোভিড সেন্টারটির বিরুদ্ধে সরকার অবশ্য কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

উত্তরপ্রদেশে গোমূত্র খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বালিয়ার বিধায়ক সুরেন্দ্র সিংহ। দুইদিন আগে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন তিনি। যেখানে বলা হয়েছে, সকালে খালি পেটে ৫০ মিলিলিটার গোমূত্র সঙ্গে ১০০ মিলিলিটার জল মিশিয়ে খেলে করোনা হবে না। এই বিধায়কের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

করোনা ঠেকাতে গোবর মেখএ দুধ দিয়ে স্নান চলছে আমদাবাদের একটি গোশালায়।
করোনা ঠেকাতে গোবর মেখে দুধ দিয়ে স্নান চলছে আমদাবাদের একটি গোশালায়।

আইএমএ-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেএ জয়দল বলেন, ‘‘গোবর বা গোমূত্র করোনার বিরুদ্ধে কার্যকরী, এমন কোনও বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ নেই। নিজেদের বিশ্বাস থেকে কেউ কেউ এমন কথা বলছেন। বরং এ সব গায়ে মাখা এবং খাওয়ার ক্ষেত্রে অন্য ঝুঁকি রয়েছে। পশুদের থেকে অন্য রোগ প্রবেশ করতে পারে মানবদেহে।’’ শুধু তাই নয়, গোবর মাখতে এবং গোমূত্র সংগ্রহ করতে যে ভাবে গোশালায় ভিড় করছেন মানুষ, তাতে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আরও বেশি বলেও মত আইএমএ সভাপতি।

তবে আইএমএ-র এই সতর্কবাণী কতটা কাজ দেবে, তা নিয়ে সন্দিহান চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদেরই একাংশ। কারণ সংবাদমাধ্যমে যে ছবি উঠে এসেছে, তাতে গোশালার বাইরে গোবর এবং গোমূত্রের জন্য রীতিমতো হুড়োহুড়ি করতে দেখা গিয়েছে সাধারণ মানুষকে। গোবর এবং গোমূত্র মিশিয়ে গায়ে মেখে দিব্যি রোদ পোহাতে দেখা গিয়েছে তাঁদের। এমনকি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ ‘গোমাতা’কে জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদও জানাতে দেখা গিয়েছে। তাঁদের যুক্তি, গোবর শুকিয়ে যাওয়ার পর দুধ দিয়ে গা ধুয়ে নেন। তার পর যোগব্যায়ামও করেন। তাই করোনা তাঁদের কাছে ঘেঁষতে পারবে না। সূত্র-আনন্দবাজার ও ডয়েসভেল।