সাজেদ রহমান, সিনিয়র সাংবাদিক।। কথিত ছাপাইনগরে যখন পৌঁছালাম, তখন বেলা সাড়ে ১১টা। এখন নগর নেই, মাজার আছে, তাকে কেন্দ্র করে ব্যবসা আছে। অনেক আসছেন, দোয়া-দুরুদ পড়ে যাচ্ছে, মনোবাসনা পূরণে টাকা-পয়সা দিচ্ছেন। কেউ কেউ মনোবাসনে পূরণে বটবৃক্ষের মূলে দড়ি, পলিথিনের দাড়ি বেঁধে দিয়ে যাচ্ছেন।
সাথে ছিলেন যশোর আইইডিবি’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আমার প্রিয় বড় ভাই নুরুল ইসলাম। এখানে সব ধর্মের মানুষ আসেন। মাজারের ওখানে পাশাপাশি বড় দুটি বৃক্ষ, একটি বট-অন্যটি অশ্বথ। পাশাপাশি যেন জড়িয়ে আছে। পাখির আবাসস্থল।
মাজারের খাদেমকে পেলাম না। তার স্ত্রী আছে, বেশি কিছু জানে না, বললাম, ছাপাইনগরী কোনটি? তার উত্তর সিডা আবার কি? বললাম, বলল-এসব জানিনে। একানে মাজার, মানসি আসে, টাকা-পয়সা দেয়।
ঘুরলাম আশে-পাশে। ছবি তুললাম। তবে তারা দেখিয়ে দিল-কোনটা, গাজী, কোনটা কালা, কোনটা চম্পাবতীর মাজার। মাজারের উত্তরে দেখলাম চারপাশে পানি, মাঝে একটা জেগে থাকা ভূমি। সেখানে নাকি সময় প্রাসাদ ছিল। কিন্তু কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই।
ছাপাইনগরে শ্রীরাম রাজার গড় বেড় বেষ্টিত বাড়ি ছিল। গড়ের মধ্যে এখনও পানি থাকে। এই বেড় দিঘীর দক্ষিণ পাশে প্রাচীন তিনটি কবরের অস্তিত্ব আছে। এই তিনটি কবর নাকি গাজী-কালু-চম্পাবতীর।
কিংবদন্তী আছে-বিরাট নগরের বাদশা সেকেন্দারের পুত্র গাজী সংসারের মায়া ত্যাগ করে পালক ভাই কালুকে সঙ্গে করে ফকির হয়ে যান। বহুদেশ ঘুরে তারা এক সন্ধ্যায় ছাপাইনগরে শ্রীরাম রাজার বাড়িতে আশ্রয় প্রার্থনা করলে, রাজা তাদের অপমান করে নগর থেকে তাড়িয়ে দেন। ফকিরের কেরামতিতে রাজবাড়িতে আগুন লেগে যায় এবং রাণী অপহৃত হন। প্রকৃত ব্যাপার অবগত হয়ে রাজা ক্ষমা প্রার্থী হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
অন্যমত আছে-তিনি নাকি সপরিবারে নিহত হন। অতঃপর গাজী, কালু বহুদেশ ঘুরে অনেক কেরামতি প্রদর্শন করেন। অন্যদিকে গাজী রাজকন্যা চম্পাবতীর প্রেমে পড়ে রাজা মুকুট রায়কে যুদ্ধে পরাজিত করে চম্পাবতীকে বিয়ে করেন।
গত শনিবার ঘুরতে গিয়েছিলাম কথিত ছাপাইনগরে, এখনকার বাদুরগাছা গ্রামে। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের শেস বৃহস্পতিবার ও ভাদ্র মাসের শেষ বৃহস্পতিবারে গাজী-কালু-চম্পবতীর মাজার প্রাঙ্গনে ওরস মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। তবে ইতিহাস বলে-গাজী-কালু-চম্পাবতী একটি উপাখ্যান।