News Bangla

আরিয়ান খানকে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করা হয়েছিল: মন্ত্রী নওয়াব মালিক

ভারতে বলিউড তারকা শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান খানকে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করা হয়েছিল বলে মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারের একজন সিনিয়র ক্যাবিনেট মন্ত্রী আজ দাবি করেছেন।

এনসিপি দলের নেতা ও মন্ত্রী নওয়াব মালিক সাংবাদিক বৈঠক করে সেই সঙ্গেই বলেছেন, একটি মাত্র সেলফি-র জন্য এই অপহরণের গোটা পরিকল্পনা বানচাল হয়ে যায়।

এর আগে গত মাসে একটি প্রমোদতরীতে নিষিদ্ধ ড্রাগস সেবনের অভিযোগে আরিয়ান খানকে গ্রেপ্তার করেছিল ভারতের মাদক নিয়ন্ত্রণ ব্যুরো বা এনসিবি, প্রায় চার সপ্তাহ জেল হাজতে থাকার পর তিনি জামিনে মুক্তি পান।

দুদিন আগে ওই মামলার তদন্তের দায়িত্ব থেকেও বিতর্কিত এক কর্মকর্তা সমীর ওয়াংখেড়েকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বস্তুত গত মাসের গোড়ায় আরিয়ান খান মাদক রাখা ও সেবনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই মহারাষ্ট্র সরকারের মন্ত্রী নওয়াব মালিক একের পর এক বিস্ফোরক দাবি করে বলে আসছেন – শাহরুখ খানের ছেলেকে আসলে ফাঁসানো হয়েছে।

ওই মামলার মূল তদন্তকারী অফিসার সমীর ওয়াংখেড়ের বিরুদ্ধে ভয় দেখিয়ে টাকা তোলা, আয়বহির্ভূত সম্পত্তি বানানো কিংবা নিজের পরিচয় জাল করে চাকরি পাওয়া – ইত্যাদি নানা অভিযোগও এনেছেন তিনি।

তবে দিওয়ালি উৎসবের পর তিনি তার ভাষায় আরও বড় ‘বোমা’ ফাটাবেন বলে আগেই ঘোষণা করে রেখেছিলেন – আর সেই প্রতিশ্রুতি রাখতেই আজ সাংবাদিক সম্মেলন করে মি. মালিক এক চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন – ‘আরিয়ানকে আসলে অপহরণের চেষ্টা হয়েছিল।’

মন্ত্রী নওয়াব মালিক
মন্ত্রী নওয়াব মালিক

নওয়াব মালিকের কথায়, “আমি সোজাসুজি বলতে চাই এটা আসলে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের কেস। মুম্বাইয়ের বিজেপি নেতা মোহিত কাম্বোজের এক নিকটাত্মীয়ই এই অপহরণের ফাঁদ পেতেছিলেন।”

“সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী আরিয়ান খানকে ওই ক্রুজশিপে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে অপহরণ করে পঁচিশ কোটি রুপি মুক্তিপণ আদায়ের খেলাও শুরু হয়ে গিয়েছিল।”

“শেষ পর্যন্ত আঠারো কোটিতে ডিল পাকা হয়, তার মধ্যে পঞ্চাশ লক্ষ রুপি হাতবদলও হয়ে গিয়েছিল। তবে ঘটনা হল, শেষ পর্যন্ত একটা সেলফি-র জন্য এই পুরো প্ল্যান ভেস্তে যায়।”

তিনি কোন সেলফির কথা বলছেন, মি. মালিক তা ভেঙে না-বললেও ধারণা করা হচ্ছে – আরিয়ান খানের গ্রেপ্তারির ঠিক পরপরই তার সঙ্গে তোলা বেসরকারি গোয়েন্দা কে পি গোসাভি-র যে সেলফি সারা দেশে ভাইরাল হয়েছিল – সেটির প্রতিই তিনি ইঙ্গিত করেছেন।

কথিত অপহরণের মূল ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে নওয়াব মালিক যাকে চিহ্নিত করেছেন, সেই বিজেপি নেতা মোহিত কাম্বোজ মাদক-বিরোধী ব্যুরোর কর্মকর্তা সমীর ওয়াংখেড়ের তোলাবাজির র‍্যাকেটেও যুক্ত ছিলেন বলেও মন্ত্রী দাবি করেন।

তিনি বলেন, কাশিফ খান নামে আরেকজন ষড়যন্ত্রকারীর মদতে মহারাষ্ট্র সরকারের বহু মন্ত্রীর ছেলেমেয়েকেও ওই ক্রুজশিপে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল – যাতে রাজ্য সরকারের বদনাম করা যায়।

মোহিত কাম্বোজ নিজে অবশ্য আগেভাগেই আত্মপক্ষ সমর্থনে বলেছেন, এই আরিয়ান খান মামলায় একটা ‘জাল ন্যারেটিভ’ তৈরির চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

নওয়াব মালিক যাকে ড্রাগ কারবারের ‘কিংপিন’ বলে বর্ণনা করেছেন, সেই কাশিফ খানকে কেন রাজ্যের মন্ত্রী আসলাম শেখ বার বার নিজের পার্টিতে ডাকতেন, সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।

এমন কী, মাদক মামলায় আর এক অভিযুক্ত সুনীল পাটিল যখন পাঁচতারা হোটেলে মদ আর কাবাবের পার্টি দিতেন, নওয়াব মালিক নিজেও সেখানে হাজির থাকতেন বলে দাবি করেছেন মি কাম্বোজ।

আরিয়ান খান মাদক মামলায় ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট নানা পক্ষের মধ্যে যে পরিমাণ কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি হয়েছে তা প্রায় নজিরবিহীন – কিন্তু আজ অপহরণের অভিযোগ পুরো ঘটনায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

বিবিসি মারাঠি বিভাগের জাহ্নবী মুলে এই কেসটি ফলো করছেন একেবারে শুরু থেকেই, তিনি অবশ্য জানাচ্ছেন, “রোজই আমরা সব পক্ষ থেকে সাঙ্ঘাতিক সব অভিযোগ শুনতে পাচ্ছি, যার অনেকগুলোই কিন্তু প্রমাণিত নয়।”

“তবে এখানে দুটো আন্ডারকারেন্ট আছে – একটা ব্যক্তিগত, একটা রাজনৈতিক।”

“মনে রাখতে হবে এনসিবি কর্মকর্তা সমীর ওয়াংখেড়ে কিন্তু এবছরের গোড়ার দিকে আরেকটি মাদক মামলায় নওয়াব মালিকের জামাতা সামির খানকে গ্রেপ্তার করেছিলেন।”

“তা ছাড়া এনসিবি একটি কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা, যেটি বিজেপি-শাসিত সরকারের নিয়ন্ত্রণে – আর অন্যদিকে মহারাষ্ট্রে ক্ষমতায় আছে একটি বিজেপি-বিরোধী জোট সরকার। একারণেই বোধহয় বিষয়টা দিন-কে-দিন এত ঘোলাটে হয়ে উঠছে।”

সমীর ওয়াংখেড়েকে আরিয়ান খান কেসের তদন্ত থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও তার পরিবার কিন্তু নওয়াব মালিকের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণে বিরতি দিচ্ছে না।

মি ওয়াংখেড়ের বাবা দানেশ্বর ওয়াংখেড়ে এদিনই সোয়া কোটি রুপির ক্ষতিপূরণ চেয়ে মহারাষ্ট্রের ওই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন।-বিবিসি।