News Bangla

আজ চুকনগর গণহত্যা দিবস

পরেশ দেবনাথ, ডুমুরিয়ার চুকনগরের গণহত্যা দিবস ৫০ বছর পূর্তি হলো আজ ২০ মে, বৃহস্পতিবার । ১৯৭১ সালের এই দিনে বর্বর পাক হনাদার বাহিনী চুকনগরে প্রবেশ করে। প্রায় দশ সহস্রাধিক নিরন্ন মানুষের গুলি করে হত্যা করে।

উল্লেখ্য, নিষ্পাপ শিশু, নর-নারী এই ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়। বাঙ্গালী জাতির জন্য সময়টা তখন ছিল বিপর্যয়। দেশে চলছিল পাকবাহিনীর বর্বরোচিত ঘটনা। খান সেনারা ও তাদের দোসর রাজাকার আল-বদর বাহিনীর সীমাহীন অমানবিক অত্যাচার। জ্বালাও, পোড়াও নীতি আর হত্যা, গুম ও পাশবিক তাণ্ডব লিলা।

অন্যদিকে স্বাধীনতাকামী মানুষ মা-মাটির সার্বভৌমত্বের জন্য সংগ্রামী হয়ে লড়েছে পাকবাহিনী হানাদারের বিরুদ্ধে। এ সময় বিপন্ন আদম আশ্রয় নিচ্ছিল ভারতে। এমনি প্রতিকুলের মধ্যে বৃহত্তর খুলনা জেলার বাগেরহাট, রামপাল, শরণখোলা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, মংলা, ডুমুরিয়া, চালনা প্রভৃতি উপজেলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় ২০ লাখ মানুষ ভারতের উদ্দেশ্যে নৌকা পথে, স্থল পথে চুকনগর বাজারে আসে।

১৯৭১ সালের ২০শে মে বেলা প্রায় ১২ টা হবে, লাল টকটকে সূর্য আরও দিপ্তীময় হয়ে উঠেছে। মানুষ দুপুরে খাওয়া ও রান্না বান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তারা দুপুরে খাওয়া সেরে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। এমন মূহুর্তে সাতক্ষীরা সড়ক ধরে পাক বাহিনীর একটি গাড়ী শো শো শব্দে বাজারের মোড়ে ঢুকে সোজা মালতিয়া মোড়ে এসে চিকন মোড়ল ও সুরেন কুণ্ডুকে প্রথমে গুলি করে।

তারপর শুরু হয় একের পর এক গুলি আর গুলি। কথাগুলো বলেছিল, প্রত্যক্ষদর্শী মালতিয়া গ্রামের শহীদ চিকন মোড়লের ছেলে এরশাদ আলী মোড়ল। মূহুর্তের মধ্যে লাল হয়ে উঠলো চুকনগরের মাটি। তারা পাতো খোলার, চুকনগরের বিলে, বলের মাঠে, বাজারের ভিতরে রায়পাড়া, মালো পাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামে ও মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছিল।

তারা সেখানে ঢুকে নিরীহ মানুষকে অকাতরে গুলি করে হত্যা করে। পাকবাহিনী অত্যাচার আর নৃশংস বর্বরতার পরেও চলে লুটপাটের ভয়ঙ্কর দৃশ্য। অগ্নিসংযোগ হত্যা আর লুটপাটের দৃশ্য ৭১ সালের ন্যক্কারজনক ঘটনা চুকনগরে গণহত্যা।

অনেক মুক্তিযোদ্ধা গবেষকরা বলেছেন, এই দিনটি চুকনগর শুধু নয় বাংলার জন্য একটা ভয়াল ও স্মৃতিবাহী দিন। বেদনা বিধর ও শোকার্ত দিন। ৪৯ বছর আগে এই দিনটির কথা স্মরণ করে চুকনগরবাসী আজও শিহরিত হয়ে ওঠে। হয়ে ওঠে সহায় সম্বল হারানোর শোকে মুহ্যমান।

এই ভয়াল দিনটি চুকনগরবাসীর স্মৃতিতে আজও জাগরুল হয়ে আছে। গণহত্যা স্মৃতিরক্ষা পরিষদের সভাপতি এবিএম শফিকুল ইসলাম জানান, সেই দিনের সেই ভয়াবহ ধ্বংসযোজ্ঞ ও মর্মান্তিক দৃশ্যের কথায় আজও অনেকে চোখের জল ফেলেন। এই ভয়াবহ গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগ লুটপাটের বেদনাঘন ইতিহাস মুক্তিযোদ্ধার ইতিহাসে অম্লান ও ভাস্কর হয়ে থাকবে চিরকাল।

গণহত্যা স্মৃতিরক্ষা পরিষদের সভাপতি এবিএম শফিকুল ইসলাম আরও জানান, গত এক বছর ধরে পৃথিবী জুড়ে এক ভয়াবহ করোনায় মৃত্যু মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। সেকারণে সীমিত আকারে কর্মসূচী হাতে নেওয়া হয়েছে। এই দিনটি স্মরণে আজ সকাল ১০ ঘটিকায় চুকনগর কলেজ ও গণহত্যা স্মৃতিরক্ষা পরিষদের উদ্যোগে গণহত্যা দিবসে এক কর্মসূচী হাতে নিয়েছে যার মধ্যে চুকনগর বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, শোকর্্যালী, স্মরণসভা ও আলোচনা সভা অনু্ষ্ঠিত হবে।