সাজেদ রহমান, সিনিয়র সাংবাদিক।।
বাংলা চলচ্চিত্রে অনুপ কুমারের অবাধ বিচরণ ১৯৩৮ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত। মাত্র আট বছর বয়সে শিশু অভিনেতা হিসাবে প্রথম কাজ দাদাসাহেব ফালকে এবং পদ্মভূষণ পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলির ‘হালখাতা’ ছবিতে। যাত্রা সেই শুরু, তারপর আর থেমে থাকেননি। বেশিরভাগ ছবিতেই তাঁকে পার্শ্বচরিত্রাভিনেতা হিসাবেই দেখা গেছে। রাজেন তরফদার, মৃণাল সেন, অজয় কর, তপন সিন্হা, চিত্ত বসু, তরুণ মজুমদার, দীনেন গুপ্ত প্রমুখের সঙ্গে একের পর এক কাজ করে গেছেন। তবে চলচ্চিত্রে খ্যাতি অর্জন করলেও অনুপকুমার মনেপ্রাণে একজন থিয়েটারকর্মী।
প্রায় পঞ্চাশের উপর প্রযোজনায় তিনি কাজ করেছেন। ১৯৮৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমি নাট্যক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তাঁকে পুরস্কৃত করা হয়। দীনবন্ধু পুরস্কারে সম্মানিত হন ১৯৯৬ সালে ও প্রবীণ নাট্যব্যক্তিত্ব হিসেবে সংবর্ধিত হন ১৯৯৭ সালে। অনুপকুমারের চলচ্চিত্রে ইতিহাস তৈরি করার কথা জানা আছে সকলেরই। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ ছবিতে চুটিয়ে কাজ করে গেছেন। যাত্রিকের ‘পলাতক’ ছবিতে তিনি বোহেমিয়ান। এমন এক বাঙালি চরিত্র, যার ঘরে মন টেকে না। চারদিক অস্থির। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে আর অনুপকুমারের লিপে ‘জীবনপুরের পথিক রে ভাই’ আজও অমর হয়ে আছে। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ঘুরে বেড়ানো এবং অভিজ্ঞতা সংগ্রহের দুর্দান্ত কাজটি তুলে ধরেছিলেন জীবন্তভাবে।
আজ কি তাঁকে বাঙালি ভুলতে বসেছে? চলচ্চিত্রের দর্শক না হলেও, থিয়েটারের দর্শক তো বটেই। তৎকালীন বহু থিয়েটার-শিল্পীর নাম আমরা জানি না। জানলেও ভুলে যেতে বসেছি সেইসব সাড়া জাগানো ইতিহাস। অভিনেতা অনুপকুমার অমর রহে — বারবার আমরা যেন তা স্বীকার করি। আজ তাঁর জন্মদিন। জন্মদিনে তাঁর প্রতি আমার ভালোবাসা।